ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ম্যাচ সব সময় আকর্ষণীয়। নানাভাবে বিশ্ব ফুটবলে আলোড়ন তোলে এই ম্যাচ। তবে পরশু রাতে কোরিন্থিয়ানস স্টেডিয়ামে যেভাবে আলোড়িত করেছে, সে রকম বোধ হয় আর দেখা যাবে না! এখনো ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা দ্বৈরথের দিকে তাকিয়ে থাকে বিশ্ব ফুটবল। এই টান খেলার সৌন্দর্য ও ফুটবলারের ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের জন্য। তবে খেলাটা দক্ষিণ আমেরিকায় হলে আরো অনেক নৈপুণ্য যোগ হয়! যেমন—বাজে মাঠ, ন্যক্কারজনক রেফারিং কিংবা ফুটবলারের মেজাজ হারানো, হাতাহাতির ঘটনাও ঘটতে পারে। ফুটবল দাঙ্গার অঘটন নিত্য ব্যাপার দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবলে।

কিন্তু পরশু রাতে সাও পাওলোতে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে যা হয়েছে, তা একদমই নতুন এবং বিস্ময়কর। খেলার সপ্তম মিনিটে ব্রাজিলের এক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ঢুকে গেছেন মাঠের ভেতর! রেফারি কিংবা ম্যাচ কমিশনারকে না জানিয়ে খেলা চলাকালীন তিনি মাঠে ঢুকে খুঁজছেন চার আর্জেন্টাইন ফুটবলারকে! তাঁকে দেখে আর্জেন্টিনার ওতামেন্দি ও অ্যাকুনা এগিয়ে মাঠে ঢোকার কারণ জানতে চান। জানা গেল, তিনি খুঁজছেন আর্জেন্টিনার তিন ফুটবলার—ক্রিস্তিয়ানো রোমেরো, জিওভান্নি লো সেলসো ও গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেসকে।

একাদশে থাকা এই তিনজনের বিরুদ্ধে কোয়ারেন্টিনের নিয়ম ভেঙে মাঠে নামার অভিযোগ। অভিযোগ না হয় আছে, তাই বলে কাউকে না জানিয়ে মাঠে ঢুকে পড়বেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা! এরপর দুই পক্ষের খেলোয়াড়রাও ঘিরে ধরেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের। তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন লিওনেল মেসি ও নেইমার। দুই দলের খেলোয়াড়রাই হতভম্ব। বিতর্কের এক পর্যায়ে রেফারি আর্জেন্টিনা দলকে পাঠিয়ে দেন ড্রেসিংরুমে। মাঠে হানা দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে ব্রাজিলের জাতীয় স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ এজেন্সির (আনভিসা) পরিচালক অ্যান্থোনিও বারা তোরেস বলেছেন, ‘আমরা আনভিসার নিয়ম মেনেই কাজটা করেছি। তাদের (আর্জেন্টিনার চার ফুটবলারকে) ফিরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আইসোলেশনে থাকতে বলা হয়েছিল, কিন্তু তারা সেটা মানেনি।

তারা স্টেডিয়ামে গেছে, মাঠে ঢুকেছে; অর্থাৎ পদে পদে নিয়ম ভেঙেছে।’ একাদশে থাকা ওই তিনজনের বাইরে চতুর্থজন হলেন এমিলিয়ানো বুয়েন্দিয়া, তাঁর বিরুদ্ধেও আছে কোয়ারেন্টিন নিয়ম ভাঙার অভিযোগ। চার আর্জেন্টাইন খেলেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে। কিন্তু গত ২৩ জুন ঘোষিত ব্রাজিল সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী, কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া অ-ব্রাজিলিয়ানদের জন্য ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারত থেকে ব্রাজিলে প্রবেশ নিষিদ্ধ। নিয়মের পরও যাঁরা ছাড় পাবেন, তাঁদের অবশ্যই ব্রাজিলে ঢোকার সময় কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে এবং দুই সপ্তাহ কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। করোনা মহামারির প্রথম দিকে অবশ্য ব্রাজিলের খোদ প্রেসিডেন্টই উদাসীন ছিলেন।

 

খুব আমলে নেননি প্রাণঘাতী ভাইরাসকে, এমনকি মাস্ক পরার বিরুদ্ধেও ছিলেন তিনি। সেই করোনা সংক্রমণে এখন পর্যন্ত পাঁচ লাখ ৮০ হাজার মানুষ মারা গেছে ব্রাজিলে। মৃত্যুর মিছিল দেখে প্রেসিডেন্ট নিজের বিশ্বাস থেকে সরে আসেন এবং জোর দেন আন্তর্জাতিক কভিড প্রটোকলের ওপর। তাই হয়তো ব্রাজিলের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মাঠে ঢুকে ধরে আনতে গিয়েছিলেন কভিড প্রটোকল ভাঙা চার আর্জেন্টাইনকে! তবে স্বাস্থ্য বিভাগ নিয়মের কথা বললেও আর্জেন্টিনার অধিনায়ক লিওনেল মেসির দাবি বিষয়টি তাঁদের জানানোই হয়নি, ‘আমরা তিন দিন ধরে এখানে আছি, তারা এখন কেন এগুলো করছে?’ সঙ্গে আর্জেন্টাইন কোচ স্কালোনিও যোগ করেছেন, ‘তাদের পক্ষ থেকে কখনো বলা হয়নি, এই ফুটবলাররা খেলতে পারবে না।’ এই অবস্থায় ম্যাচের ভাগ্য কী হবে, বলা মুশকিল।

দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবলের গভর্নিং বডি কনমেবল তাকিয়ে আছে রেফারি ও ম্যাচ কমিশনারের রিপোর্টের দিকে। তাঁদের রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে ম্যাচটি আবার হবে, নয়তো ফুটবল আইন মেনে আর্জেন্টিনাকে জয়ী ঘোষণা করা হতে পারে। পরিণতি যা-ই হোক, এমন কাণ্ড তো দ্বিতীয়বার আর দেখা যাবে না যে ফুটবলার ‘ধরতে’ মাঠে হানা দিয়েছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা!